July 28, 2012

সততাই সাফল্যের মুল মন্ত্র - মার্থা স্টুয়ার্ট

Martha Stewart
মার্থা স্টুয়ার্ট। মার্কিন উদ্যোক্তা, লেখক ও ম্যাগাজিন প্রকাশক। রান্না, হস্তশিল্প, বাগান করা ইত্যাদি বিষয়ে বই লিখেছেন, টেলিভিশন শো করেছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত মার্থা স্টুয়ার্ট লিভিং ওমনিমিডিয়া বছরে প্রায় ২৩ কোটি ডলার আয় করে।

আমার মা-বাবা দুজনই শিক্ষক। আমার স্কুলের দুজন শিক্ষকও আমাকে দারুণ অনুপ্রাণিত করতেন। সে সময় আমি শিক্ষকই হতে চাইতাম। কলেজে আমি নানা বিষয়ে জানলাম। স্টক মার্কেট আমাকে খুব আকৃষ্ট করে।
স্টক ব্রোকার হয়েছিলাম আমি। এখন আমি চাই নানা বিষয়ে জানা একজন মানুষ হতে, নতুন নতুন বিষয় শিখে সবাইকে যাতে শেখাতে পারি। এখন আমি তা-ই করছি। তাই আমি মনে করি, আমি একজন শিক্ষক। মায়ের ৮০তম জন্মদিনে আমার এক শিক্ষকের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। তিনি যেন একেকটা ছোটখাটো শক্তির উৎস। তাঁর নিজের সন্তান ছিল না, তাতে কিন্তু তাঁর ভালোবাসার কমতি হয়নি।
তিনি ছিলেন পক্ষপাতহীন, কিন্তু কঠোর; কঠিন কিন্তু ক্ষমাপরায়ণ। তিনি ছিলেন আমার চোখে আদর্শ শিক্ষক।
এক বছরে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু মানুষের সংস্পর্শে এসেছি আমি, যাঁদের আমি বলি আমার পরামর্শদাতা। এই দলে নানা ধরনের মানুষ পড়েন। আমার পথের পাশের বাগানের মালী এমন একজন। চেনা একজন গোয়ালাও হতে পারেন। কারও সঙ্গে আবার আমার দেখা হয়নি, কেবল পড়েছি তাঁর কথা। যেমন—গার্সিয়া মার্কেস। আরও আছেন জর্জ এলিয়ট, জেন অস্টিন। ছোটবেলা থেকেই প্রচুর বই পড়তাম। আমাদের পাবলিক লাইব্রেরির নিয়মটা হলো, একটি পরীক্ষায় পাস করলে ছোটদের লাইব্রেরির পরের ধাপে যেতে দেওয়া হবে, যেখানে থাকত বড়দের পড়ার উপযোগী নানা বই। আমি-ই প্রথম সেই পরীক্ষায় পাস করেছিলাম। বাড়িতে অনেক কাজ থাকত, কিন্তু আমাদের পড়ার সময়টা দেওয়া হতো। আমার প্রিয় একটা চেয়ার ছিল, এমনকি প্রিয় একটা গাছও ছিল, যার তলে বসে আমি পড়তাম। রোববার সবার সঙ্গে চার্চে যাওয়ার পথে গাড়িতেও বসে পড়ে ফেলতাম অনেক বই। লাইব্রেরির এ থেকে জেড পর্যন্ত—সবই একসময় পড়ে ফেলেছিলাম। তবে পরে বেছে বেছে পড়তে শুরু করলাম। এ জন্য পরামর্শ নিতাম লাইব্রেরিয়ানের, বইয়ের রিভিউ পড়তাম। এখনো প্রচুর পড়ি। বই পড়াটা আমার জানার দারুণ একটা সুযোগ মনে হয়। এমনকি আমি জানতে পারি, আমার পাঠকেরা কোন বিষয়ে জানতে চায়। এখন যেমন বাগান করা নিয়ে পড়ছি। এসব বিষয়ে আমার উৎসাহের কমতি নেই। পথে হাঁটতে হাঁটতেই নতুন সব আইডিয়া পেয়ে যাই। এসব জিনিস হয়তো আগেও দেখেছি, কিন্তু এখন আমার চোখ আরও সতর্ক। রোজকার নানা সমস্যার জন্য খুব সহজ সমাধান খুঁজে বেড়াই আমি। আমার বেশি ঘুমের প্রয়োজন নেই। কৌতূহলী মানুষের জীবনে ঘুম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো নতুন কিছু খুঁজে পাওয়া। আমি তাই রাতে পড়াশোনা করি। এটা একটা অদ্ভুত জীবন, কিন্তু মজার। আমি এখনো ঠিক আগের মানুষটাই আছি। আমার কাজ আগের তুলনায় ভালো হয়েছে। সফল একটা ব্যবসা চালাচ্ছি। কিন্তু মানুষ হিসেবে একদম বদলাইনি। আমার পছন্দ-অপছন্দও একই রয়ে গেছে। বোধ হয় আমার রুচির একটু পরিবর্তন হয়েছে, আগের চেয়ে ভালো হয়েছে। এখনো আমি ঘুম থেকে উঠে বিড়ালের বর্জ্য পরিষ্কার করি। বাগানে গিয়ে আগাছা তুলি। পা দুটো আমি মাটিতেই রাখি। আর এ জন্যই পরিষ্কার বুঝতে পারি, আমার জীবনে আশপাশে কী ঘটছে।
জীবনযাত্রা, পরিবার—এসব এখন মানুষের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। অনেক দিন ধরেই আমি এ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু আমি কখনো বলতে যাইনি, দেখো, এত দিন ধরে আমি-ই তো এসব বলে যাচ্ছি। আমার কথা হলো, কাজ করে যাও। একদিন তার স্বীকৃতি পাবেই। আমার প্রথম বই লেখাটাই যেন আমার জীবনটা বদলে দিল। এ ব্যাপারে আমি খুব খুঁতখুঁতে। ভালো কিছু না হলে আমি সেটা করি-ই না। আমার সব বই পাঠকপ্রিয় হয়েছে। আমি একটা মান তৈরি করেছি। সেটা আমি ধরে রাখব। চাইলে হয়তো আমার ব্যবসা আরও বড় করতে পারতাম, কিন্তু মান ধরে রাখার জন্যই আস্তে আস্তে এগিয়েছি।
সাফল্য পেতে হলে কোনো বিষয়ে আগ্রহ ধরে রাখতে হবে। খোলা মনে মানুষ হতে হবে। বড় শিল্পীরা সবাই এমন মানুষই। যদিও কিছু কিছু ব্যাপারে তাঁদের খুব নির্দিষ্ট মনে হয়, যেমন—পিকাসো। কিন্তু একই সঙ্গে আপনার দুটো গুণই থাকতে হবে। আমার মনে হয়, কাজের প্রতি খুব মনোযোগী হওয়া উচিত। কিন্তু এটা নয় যে জীবনের হালকা দিকগুলো আপনার নজর এড়িয়ে যায়। ২৫ বছর ধরে আমি একই বাড়িতে বাস করছি। আমি কোনো প্রাসাদের মতো বাড়ি কিনতে যাইনি। আমার কাজের বিষয়টাই হলো জীবনযাত্রা। কিন্তু প্রাসাদের জীবনযাত্রা আমার পাঠকদের কোনো কাজে আসবে না। পাঠকদের মধ্যে আমার বিশ্বাসযোগ্যতা ধরে রাখতে হবে। তাই এ বাড়িটাকেই আমি মনের মতো করে সাজিয়েছি। একটু একটু করে আরও সুন্দর করে তুলেছি। অনেকেই ভাবে, আমি কী দারুণ একটা বাড়িতে থাকি! কিন্তু এটা আমার সেই আগের বাড়ি-ই। আমি মনে করি, আপনি যা-ই তৈরি করেন বা বিক্রি করেন, তা ভালো হতে হবে। একটা খারাপ জিনিস মানেই বাজার থেকে আপনার হারিয়ে যাওয়া।
কাজের প্রতি সততাই হলো সাফল্যের মূলমন্ত্র।
সূত্র:একাডেমি অব অ্যাচিভমেন্ট,  ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: রুহিনা তাসকিন আপু

No comments:

Post a Comment