July 28, 2012

ব্যবসা শুরুর আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন

নতুন ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে মাত্রাতিরিক্ত উত্তেজনা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। ব্যবসাটি এ মুহূর্তে শুরু না করলে আমি খুব বড় কিছু মিস করবো_ এ ধারণা থেকে নতুন ব্যবসায়ীরা প্রায়ই ব্যবসাটি সম্পর্কে ভালোমতো খোজ-খবর না নিয়েই বা লাভ-লোকসানের বিষয়টি সঠিকভাবে যাচাই না করেই ব্যবসায় নেমে পড়েন। এ জন্য পরে অনেককেই ভোগানন্তি পোহাতে হয়।
আপনি কি ব্যবসাটি সম্পর্কে যথেষ্ট খোজ-খবর নিয়েছেন?
# প্রতিদ্বন্দ্বিতার এ যুগে আপনার ব্যবসাটির সম্ভাব্য বাজার, ব্যবসা ক্ষেত্রে আপনার প্রতিদ্বন্দ্বীদের অবস্থান, ব্যবসাটি পরিচালনার নাড়ি-নক্ষত্র, মোট কথা নিজস্ব মার্কেটিং পলিসি সম্পর্কে সঠিক পরিকল্পনা না করেই ব্যবসায় নামলে আপনি ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারেন।
# আবার খুব বেশি গবেষণা করলে ব্যবসাটি হয়তো আপনার করাই হবে না। তাই কিছু ঝুকি আপনাকে নিতেই হবে, তবে তা একেবারে অন্ধকারে থেকে নয়।
সাজেশন : আপনি ব্যবসাটি সম্পর্কে কি কি জানতে চান তার একটি লিস্ট তৈরি করুন। এরপর আপনার দুই-তিনজন ব্যবসায়ী বন্ধু বা পরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করে তাদের মতামত নিন।
ব্যবসা ক্ষেত্রে চোরাবালি আছে_ আপনি কতোটা বাস্তববাদী?
# প্রতিটি নতুন ব্যবসাতেই ঝুকি থাকে। এ ঝুকিকে জয় করতে পারলে তা আপনাকে আশাতীত সাফল্য এনে দিতে পারে।
# ঝুকি নেয়া আর দায়িত্বজ্ঞানহীনতা কিন্তু এক কথা নয়। ব্যবসাটি সফল করতে সম্ভাব্য সব পদক্ষেপ নিয়েও আপনি ব্যর্থ হতে পারেন। তবে ক্ষতির সম্ভাবনা আগে থেকে যাচাই করে সঠিক পদক্ষেপ নিলে আপনি হতাশার হাত থেকে বাঁচবেন। আপনি যদি দায়িত্বজ্ঞানহীনের মতো ব্যবসাটির চোরাবালিকে অবজ্ঞা করেন তবে ক্ষতি হওয়াটাই স্বাভাবিক।
# মনে রাখবেন, ঝুকি নিয়ে একবার ব্যর্থ হলে পরের বার হয়তো সফল হবেন, তবে দায়িত্বে অবহেলা করলে কখনোই সফল হতে পারবেন না।
# ভাবুন এ ব্যবসাটি আমি এমনভাবে করবো যেভাবে আগে কেউ করেনি। নতুনত্বের চিন্তা করতে হলে আপনাকে অবশ্যই পুরনো ধারাটি সম্পর্কে জানতে হবে। শুরুতেই চমক সৃষ্টি করতে গিয়ে হয়তো কেউ কেউ সফল হয়, তবে এ ক্ষেত্রে ব্যর্থতার হারই বেশি।
সাজেশন : ঝুকি নিন, তবে দায়িত্বজ্ঞানহীন অন্ধের মতো নয়।
আপনি কি স্বনির্ভর হওয়ার ক্ষেত্রে যথেষ্ট যোগ্য?
# স্বনির্ভর হওয়ার চেষ্টা অনেকের জন্যই আশীর্বাদ হয়ে আসে। তবে কারো কারো জন্য তা একাকিত্ব ও হতাশার কারণ হয়ে দাড়ায়। তাই ব্যবসা শুরু করার আগে নিজের শক্তিশালী ও দুর্বল দিকগুলো সম্পর্কে ভাবুন তারপর পরিকল্পনা তৈরি করুন।
# নিজেকে নিজেই যাচাই করুন। যেমন আপনার কোন আচরণগুলো আপনার ব্যবসার ক্ষতি করতে পারে, আপনি সমস্যার সমাধান কতোটুকু করতে পারেন, অন্যদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক বা লেনদেন কেমন, ব্যবসা জীবন ও ব্যক্তি জীবনকে আপনি কিভাবে পৃথক করবেন ইত্যাদি।
সাজেশন : আগে নিজের সম্পর্কে জানুন, তারপর পরিকল্পনা করুন।
প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়গুলোতে আপনি কতোটা দক্ষ?
# আমি কেন এ ব্যবসায় নামলাম_ এ জাতীয় প্রশ্ন ব্যবসা করতে গিয়ে হরহামেশাই মনে আসে। বিশেষ করে নতুন ব্যবসায়ীদের। কারণ ব্যবসা করতে গিয়ে নিয়মিত অফিশিয়াল কাগজপত্র নাড়াচাড়া, কর্মচারীদের সঙ্গে সমন্বয়, ইনকাম ট্যাক্স, ব্যাংকিং সেক্টর ইত্যাদি প্রাতিষ্ঠানিক বিষয় সামনে এলেই তারা ব্যবসার উদ্যম হারিয়ে ফেলেন।
সাজেশন : আপনি মনে মনে যে ছবিটি একেছেন তাকে বাস্তব রূপ দিতে প্রয়োজনীয় প্রাতিষ্ঠানিক বিষয়গুলো ভালোভাবে বুঝে নিতে চেষ্টা করুন। অবশ্যই ব্যবসায় নামার আগে, পরে নয়।
আপনার কি যথেষ্ট আর্থিক সঙ্গতি আছে?
# ব্যবসা শুরু করার আগে এক রকম ধারণা করলেও মাঠে নেমে টাকার অঙ্কটা ধারণার চেয়ে অনেক বেড়েও যেতে পারে। তাই হিসাব করতে গিয়ে টাকার অঙ্কটা একটু বাড়তি রাখুন।
# কম পুজিতে বেশি লাভ_ এ প্রলোভনটি আপনার ক্ষতি করতে পারে। পরিশ্রম করার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাড়াতে পারে।
# অনেক ব্যবসাই প্রাথমিকভাবে ব্যর্থ হয়। তবে সময় নিয়ে বেশি পুজি খাটাতে পারলে সফলতা আসে।
সাজেশন : ব্যবসা ক্ষেত্রে বেশি লাভের আশায় কোনো শর্টকাট রাস্তা খুঁজতে যাবেন না।
শেষ কথা : ব্যক্তিগত উদ্যোগে ব্যবসা করতে নামার আগে অবশ্যই বিভিন্ন বিষয়ে ভাবনা-চিন্তার প্রয়োজন আছে। তবে বেশি ভাবতে গিয়ে আবার পরিসংখ্যানবিদ হলে চলবে না। বাস্তবতার খাতিরে যতোটুকু ভাবা দরকার ততোটুকু ভেবে ব্যবসায় নেমে পড়ুন। কে জানে, আপনার জীবনের সেরা সময়টা হয়তো সামনেই অপেক্ষায় আছে !

No comments:

Post a Comment