মাজেদুল মোরশেদ
কয়েক দিন আগে আমি আর রাকিব, বাজারে গেলাম আমাদের বাড়ীর জন্য কাট আউট কিনতে। আগের কাট আউটটা অল্প লোডেই পুড়ে যায়। তাই দোকানে গিয়ে ভাল মানের কাট-আউট চাওয়ায়, আমাদেরকে একটা ৯০ টাকা দামের ৩২ এ্যাম্পিয়ারের কাট আউট দেখাল । মাত্র ২০/৩০ গ্রাম তামা আর চিনামাটির তৈরি একটি জিনিসের দাম ৯০ টাকা ব্যাপারটা আমার কাছে বেশ অস্বাভাবিক মনে হলো। দেখলাম কাট আউটের গায়ে মেইড ইন চায়না লেখা । বাংলাদেশী কোন ভাল মানের কাট আউট আছে কিনা? জিজ্ঞাসা করায়, তিনি বললেন-"বাংলাদেশে কোন ভাল মানের কাট আউট তৈরি হয় না", আমি ভাবলাম তার কাছে মনে হয় বাংলাদেশে তৈরি ভাল মানের কোন কাট আউট নেই। তাই পাশের দোকানে গেলাম, সেখানে গিয়েও ভাল মানের কাট আউট চাওয়াতে তিনি ইন্ডিয়ান একটা ৯৫ টাকা দামের কাট আউট দেখালেন।
দেশি ভাল কোনটা দিতে বলায়, তিনি এবার একটা কাট আউট দেখালেন, যেটা চিনের তৈরি। আবারো দেশি কোনটার কথা বলায়, তিনি কাট আউটের গায়ে খোদায় করে মেইড ইন চায়না লেখাটা দেখালেন। আমি বললাম- আরে ভাই ভিন দেশী ভালটা দিতে বলল কে? আমিতো আমার স্বদেশী ভাল মানের কোনটা চাচ্ছিলাম। যাই হোক, এই কথার উত্তরে এই দোকান থেকেও শুনতে হল- "বাংলাদেশে কোন ভাল মানের কাট আউট তৈরি হয় না"। মনে মনে বাংলাদেশী বিনিয়োগকারীদের উপর খুব রাগ হল, সিরামিক আর তামা দিয়ে সহজেই যেই জিনিসটা তৈরি করা যায়, কেন তারা সেটা তৈরি করে না । স্বাভাবিক ভাবেই সবচাইতে বেশি রাগ হল আমাদের কুষ্টিয়ার বিআরবি ক্যাবলস এর উপর। আজ যখন বিআরবির প্রতিষ্ঠা বার্যিকি উপলক্ষে দেশব্রতীর জন্য আমাকে একটা লেখা লিখতে বলা হল - তখন প্রথমেই আমার এই কাহিনীটা মনে পড়লো। আমরা যার কাজ থেকে বেশি আশা করি, তার কাছ থেকে আশার চেয়ে যদি কম পাওয়া যায়, তাহলেই তার উপর রাগ লাগে। বিআরবি উপর আমার রাগ হওয়ার কারণটা ছিল এটাই। বর্তমানে কুষ্টিয়ার যে কয়েকটা বিষয় নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি, তার মধ্যে অন্যতম হল বি আর বির তার, ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতি, আর কিয়াম মেটালের রান্নার সরঞ্জামাদি। শুধু মাত্র এক জনের একক উদ্যোগে একটা প্রতিষ্ঠান হাজার হাজার মানুষের কর্ম সংস্থানের সৃষ্টি করতে পারে তার জ্বলন্ত উদাহরণ বি আর বি ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলো। আমি অবাক হই কারণ, সেই ১৯৭৮ সালে যখন বিদ্যুৎ সংযোগই আমাদের অনেক সাধারণ মানুষের কল্পনার বাইরেই একটা বিষয়, তখন মজিবর রহমান কিভাবে বিদ্যুতের তার তৈরির মতো একটা বিষয়ে বিনিয়োগ করার কথা চিন্তা করলেন। যেখানে বর্তমানে আমরা গ্লোবাল ভিলেজে বাস করেও আমাদের গ্রাম, শহর অথবা সর্বোচ্চ দেশের মধ্যে দেখা পরিচিত পেশাগুলো বাদ দিয়ে নতুন অন্য কোন পেশা নেবার মতো বিষয় কল্পনাও করতে পারি না। সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই আমরা দেখে দেখে শিখে এসেছি, একমাত্র সম্মান যখন পেশা সরকারী চাকরি করা। আর যদি তা না পাওয়া যায়, সম্মান নিয়ে বেচে থাকতে হলে অন্তত বেসরকারি হলেও যে কোন প্রকারের একটা চাকরি করতেই হবে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাও আমাদেরকে শিখিয়েছে, কিভাবে লেখা পড়া শিখে শুধুমাত্র চাকরি করতে যেতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে যারা লেখা পড়ার সুযোগ পেয়েছে, তাদেরকেও আমরা তাদের শিক্ষা অনুসারে চাকরি দিতে পারিনি। আবার বাস্তব জীবনের কাজের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষাও তাদেরকে দেওয়া হয় না। মজিবর রহমানও আমাদের এই চেনা পরিবেশেই বড় হয়েছেন, তার পরেও তিনি এত বড় উদ্যোগ নেবার সাহস দেখালেন কিভাবে ! আবার তার এই চেষ্টাও যে একবারেই সফল হয়েছে তা নয়। বিভিন্ন সমস্যার কারণে এক পর্যায়ে তার কারখানাটি পুরোপুরি বন্ধও করে দিতে হয়েছিল। তার পরেও তিনি আশা হারাননি, আর সে কারণেই ১৯৮৩ সালে আবার উৎপাদন শুরু করার পর তাকে আর কখনই পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। দেশের চাহিদা পূরণ করার পর বি আর বি এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তার পণ্য রপ্তানি করছে। আর আমরাও পেয়েছি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গর্ব করার মতো আমাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠান- বি আর বি ক্যাবলস, অন্যান্য আরো অনেক সনদের সাথে যার আছে আইএসও ২০০৮ সনদ, আছে দুর্লভ Germanischer Lloyd (GL) Approval Certificate, যার ফলে বাংলাদেশে একমাত্র বিআরবি Shipboard Cable তৈরির অনুমোদন পেয়েছে। বি আর বির প্রায় ১০টি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে কিয়াম ছিরাতুননেছা মেমোরিয়াল ট্রাট। যা আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের কল্যাণে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা রাখছে। শুধু মাত্র "মেইড ইন বাংলাদেশ" এই লেখা দেখেই বিশ্বের অনেক দেশের মানুষ আমার বাংলাদেশকে চেনে। আমাদের অবশ্যই শুনতে ভাল লাগে, যখন একজন বিদেশী বন্ধু বাংলাদেশে তৈরি কোন পণ্যকে ভাল বলে । আর যে সকল প্রতিষ্ঠান "মেইড ইন বাংলাদেশ" লিখে উন্নত মানের পণ্য বিদেশে পাঠায়, তারা যেমন বিশ্ব দরবারে নিজেদের সুনাম কুড়ায় , সেই সাথে আমার দেশও বিশ্বের কাছে সুনামের সাথে পরিচিত হয়। আমরা বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাড়াতে পারি, বাংলাদেশী হিসেবে। যেই বাংলাদেশের জন্য ৩০লক্ষ শহীদ জীবন দিয়েছিল। আজ হয়তবা আমাদের মধ্যে কেউ কেউ শুধু মাত্র মুক্তিযুদ্ধের সৃতি চারণ করাকেই দেশপ্রেম প্রকাশের একমাত্র পথ বলে মনে করেন। নতুন প্রজন্মের অনেকেই আনমতে ভেবে বসে আছে যে, একমাত্র মহান শহীদ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশংসা করার মধ্যেই দেশ প্রেম সীমাবদ্ধ। কিন্তু যে সুখী সমৃদ্ধ দেশের জন্য আমাদের লক্ষ লক্ষ ভাই বোনেরা জীবন দিয়েছিল, সেই দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য কম মানুষকেই ঝুঁকি নিতে দেখা যায়। এমনকি যারা নিজেরা ঝুঁকি নিয়ে হাজার হাজার মানুষের কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করছেন, তারাও তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু থেকে অনেক ক্ষেত্রেরই বঞ্চিত হন। আমরা আমাদের ১৯৭১ এর বীরদের যথাযথ সম্মান দেই না, যারা আমাদেরকে স্বাধীন দেশ দিয়েছিল। আর বর্তমানের বীরেরা, যারা নিজেরা ঝুঁকি নিয়ে আমাদেরকে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিচ্ছেন, তারাতো পুরোপুরি উপেক্ষিত। আমাদের অবশ্যই উচিৎ মজিবর রহমানের মত বর্তমানের বীরদের যথাযথ মূল্যায়ন করা, যা দেখে নতুন প্রজন্মও এ জাতীয় উদ্যোগ নেবার জন্য অনুপ্রাণিত হয়ে বর্তমানের সত্যিকারের দেশপ্রেমীক হতে পারে। যারা আমাদের দেশে উদ্যোগতার ভূমিকা পালন করেন, তাদের প্রতিকূল অবস্থা থেকে রক্ষার জন্য আমাদের সামগ্রিক ভাবে এগিয়ে আসতে হবে। সৃজনশীল ও কারিগরি শিক্ষার বহুল প্রচলন, সরকারি ও বেসরকারি ঊৎপাদনমুখী শিল্প স্থাপন, স্বল্প-সুদে ব্যাঙ্ক ঋণ সুবিধার ব্যবস্থা করতেই হবে। টাকার অভাবে আমাদের অনেক নিশ্চিত সম্ভাবনা ধ্বংস হয়ে যায় । মজিবুর রহমানের মত আমাদের আরও কিছু সৃজনশীল উদ্যোক্তা দরকার, যারা মেধা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে আমাদের জাতিকে শুধুমাত্র কৃষিনির্ভরতা থেকে মুক্ত করে শিল্পসমৃদ্ধ দেশে পরিণত করবে। প্রথম দিকে হইতবা আমাদের নতুন উদ্যেগতারা তুলনামুলক ভাবে অতটা মান সম্পন্ন পণ্য তৈরী করতে পারবে না, তার পরেও আমাদের দায়িত্ব হবে দেশীয় পণ্য কিনে তাদেরকে উৎসাহিত করা, প্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকিয়ে রাখা। তাহলে এখন যেমন বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ আস্থার সাথে ভাল মানের বৈদুতিক সরঞ্জাম হিসাবে বিআরবির তৈরী পণ্য কেনে । তেমনি ভাবে অবশ্যই একদিন আমরা মান সম্পন্ন পণ্য হিসাবে, আস্থার সাথেই সেই পণ্যগুলো কিনতে পারব, যেগুলোর গায়ে লেখা থাকবে "মেইড ইন বাংলাদেশ"।
দেশি ভাল কোনটা দিতে বলায়, তিনি এবার একটা কাট আউট দেখালেন, যেটা চিনের তৈরি। আবারো দেশি কোনটার কথা বলায়, তিনি কাট আউটের গায়ে খোদায় করে মেইড ইন চায়না লেখাটা দেখালেন। আমি বললাম- আরে ভাই ভিন দেশী ভালটা দিতে বলল কে? আমিতো আমার স্বদেশী ভাল মানের কোনটা চাচ্ছিলাম। যাই হোক, এই কথার উত্তরে এই দোকান থেকেও শুনতে হল- "বাংলাদেশে কোন ভাল মানের কাট আউট তৈরি হয় না"। মনে মনে বাংলাদেশী বিনিয়োগকারীদের উপর খুব রাগ হল, সিরামিক আর তামা দিয়ে সহজেই যেই জিনিসটা তৈরি করা যায়, কেন তারা সেটা তৈরি করে না । স্বাভাবিক ভাবেই সবচাইতে বেশি রাগ হল আমাদের কুষ্টিয়ার বিআরবি ক্যাবলস এর উপর। আজ যখন বিআরবির প্রতিষ্ঠা বার্যিকি উপলক্ষে দেশব্রতীর জন্য আমাকে একটা লেখা লিখতে বলা হল - তখন প্রথমেই আমার এই কাহিনীটা মনে পড়লো। আমরা যার কাজ থেকে বেশি আশা করি, তার কাছ থেকে আশার চেয়ে যদি কম পাওয়া যায়, তাহলেই তার উপর রাগ লাগে। বিআরবি উপর আমার রাগ হওয়ার কারণটা ছিল এটাই। বর্তমানে কুষ্টিয়ার যে কয়েকটা বিষয় নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি, তার মধ্যে অন্যতম হল বি আর বির তার, ইলেকট্রিক্যাল যন্ত্রপাতি, আর কিয়াম মেটালের রান্নার সরঞ্জামাদি। শুধু মাত্র এক জনের একক উদ্যোগে একটা প্রতিষ্ঠান হাজার হাজার মানুষের কর্ম সংস্থানের সৃষ্টি করতে পারে তার জ্বলন্ত উদাহরণ বি আর বি ও এর অঙ্গ সংগঠনগুলো। আমি অবাক হই কারণ, সেই ১৯৭৮ সালে যখন বিদ্যুৎ সংযোগই আমাদের অনেক সাধারণ মানুষের কল্পনার বাইরেই একটা বিষয়, তখন মজিবর রহমান কিভাবে বিদ্যুতের তার তৈরির মতো একটা বিষয়ে বিনিয়োগ করার কথা চিন্তা করলেন। যেখানে বর্তমানে আমরা গ্লোবাল ভিলেজে বাস করেও আমাদের গ্রাম, শহর অথবা সর্বোচ্চ দেশের মধ্যে দেখা পরিচিত পেশাগুলো বাদ দিয়ে নতুন অন্য কোন পেশা নেবার মতো বিষয় কল্পনাও করতে পারি না। সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই আমরা দেখে দেখে শিখে এসেছি, একমাত্র সম্মান যখন পেশা সরকারী চাকরি করা। আর যদি তা না পাওয়া যায়, সম্মান নিয়ে বেচে থাকতে হলে অন্তত বেসরকারি হলেও যে কোন প্রকারের একটা চাকরি করতেই হবে। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাও আমাদেরকে শিখিয়েছে, কিভাবে লেখা পড়া শিখে শুধুমাত্র চাকরি করতে যেতে হয়। কিন্তু আমাদের দেশে যারা লেখা পড়ার সুযোগ পেয়েছে, তাদেরকেও আমরা তাদের শিক্ষা অনুসারে চাকরি দিতে পারিনি। আবার বাস্তব জীবনের কাজের জন্য প্রয়োজনীয় শিক্ষাও তাদেরকে দেওয়া হয় না। মজিবর রহমানও আমাদের এই চেনা পরিবেশেই বড় হয়েছেন, তার পরেও তিনি এত বড় উদ্যোগ নেবার সাহস দেখালেন কিভাবে ! আবার তার এই চেষ্টাও যে একবারেই সফল হয়েছে তা নয়। বিভিন্ন সমস্যার কারণে এক পর্যায়ে তার কারখানাটি পুরোপুরি বন্ধও করে দিতে হয়েছিল। তার পরেও তিনি আশা হারাননি, আর সে কারণেই ১৯৮৩ সালে আবার উৎপাদন শুরু করার পর তাকে আর কখনই পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। দেশের চাহিদা পূরণ করার পর বি আর বি এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তার পণ্য রপ্তানি করছে। আর আমরাও পেয়েছি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গর্ব করার মতো আমাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠান- বি আর বি ক্যাবলস, অন্যান্য আরো অনেক সনদের সাথে যার আছে আইএসও ২০০৮ সনদ, আছে দুর্লভ Germanischer Lloyd (GL) Approval Certificate, যার ফলে বাংলাদেশে একমাত্র বিআরবি Shipboard Cable তৈরির অনুমোদন পেয়েছে। বি আর বির প্রায় ১০টি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে কিয়াম ছিরাতুননেছা মেমোরিয়াল ট্রাট। যা আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের কল্যাণে গুরুত্বপুর্ণ ভুমিকা রাখছে। শুধু মাত্র "মেইড ইন বাংলাদেশ" এই লেখা দেখেই বিশ্বের অনেক দেশের মানুষ আমার বাংলাদেশকে চেনে। আমাদের অবশ্যই শুনতে ভাল লাগে, যখন একজন বিদেশী বন্ধু বাংলাদেশে তৈরি কোন পণ্যকে ভাল বলে । আর যে সকল প্রতিষ্ঠান "মেইড ইন বাংলাদেশ" লিখে উন্নত মানের পণ্য বিদেশে পাঠায়, তারা যেমন বিশ্ব দরবারে নিজেদের সুনাম কুড়ায় , সেই সাথে আমার দেশও বিশ্বের কাছে সুনামের সাথে পরিচিত হয়। আমরা বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাড়াতে পারি, বাংলাদেশী হিসেবে। যেই বাংলাদেশের জন্য ৩০লক্ষ শহীদ জীবন দিয়েছিল। আজ হয়তবা আমাদের মধ্যে কেউ কেউ শুধু মাত্র মুক্তিযুদ্ধের সৃতি চারণ করাকেই দেশপ্রেম প্রকাশের একমাত্র পথ বলে মনে করেন। নতুন প্রজন্মের অনেকেই আনমতে ভেবে বসে আছে যে, একমাত্র মহান শহীদ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশংসা করার মধ্যেই দেশ প্রেম সীমাবদ্ধ। কিন্তু যে সুখী সমৃদ্ধ দেশের জন্য আমাদের লক্ষ লক্ষ ভাই বোনেরা জীবন দিয়েছিল, সেই দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য কম মানুষকেই ঝুঁকি নিতে দেখা যায়। এমনকি যারা নিজেরা ঝুঁকি নিয়ে হাজার হাজার মানুষের কর্ম সংস্থানের ব্যবস্থা করছেন, তারাও তাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু থেকে অনেক ক্ষেত্রেরই বঞ্চিত হন। আমরা আমাদের ১৯৭১ এর বীরদের যথাযথ সম্মান দেই না, যারা আমাদেরকে স্বাধীন দেশ দিয়েছিল। আর বর্তমানের বীরেরা, যারা নিজেরা ঝুঁকি নিয়ে আমাদেরকে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর সুযোগ করে দিচ্ছেন, তারাতো পুরোপুরি উপেক্ষিত। আমাদের অবশ্যই উচিৎ মজিবর রহমানের মত বর্তমানের বীরদের যথাযথ মূল্যায়ন করা, যা দেখে নতুন প্রজন্মও এ জাতীয় উদ্যোগ নেবার জন্য অনুপ্রাণিত হয়ে বর্তমানের সত্যিকারের দেশপ্রেমীক হতে পারে। যারা আমাদের দেশে উদ্যোগতার ভূমিকা পালন করেন, তাদের প্রতিকূল অবস্থা থেকে রক্ষার জন্য আমাদের সামগ্রিক ভাবে এগিয়ে আসতে হবে। সৃজনশীল ও কারিগরি শিক্ষার বহুল প্রচলন, সরকারি ও বেসরকারি ঊৎপাদনমুখী শিল্প স্থাপন, স্বল্প-সুদে ব্যাঙ্ক ঋণ সুবিধার ব্যবস্থা করতেই হবে। টাকার অভাবে আমাদের অনেক নিশ্চিত সম্ভাবনা ধ্বংস হয়ে যায় । মজিবুর রহমানের মত আমাদের আরও কিছু সৃজনশীল উদ্যোক্তা দরকার, যারা মেধা ও পরিশ্রমের মাধ্যমে আমাদের জাতিকে শুধুমাত্র কৃষিনির্ভরতা থেকে মুক্ত করে শিল্পসমৃদ্ধ দেশে পরিণত করবে। প্রথম দিকে হইতবা আমাদের নতুন উদ্যেগতারা তুলনামুলক ভাবে অতটা মান সম্পন্ন পণ্য তৈরী করতে পারবে না, তার পরেও আমাদের দায়িত্ব হবে দেশীয় পণ্য কিনে তাদেরকে উৎসাহিত করা, প্রতিষ্ঠানগুলোকে টিকিয়ে রাখা। তাহলে এখন যেমন বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ আস্থার সাথে ভাল মানের বৈদুতিক সরঞ্জাম হিসাবে বিআরবির তৈরী পণ্য কেনে । তেমনি ভাবে অবশ্যই একদিন আমরা মান সম্পন্ন পণ্য হিসাবে, আস্থার সাথেই সেই পণ্যগুলো কিনতে পারব, যেগুলোর গায়ে লেখা থাকবে "মেইড ইন বাংলাদেশ"।
No comments:
Post a Comment