July 28, 2012

ক্যারিয়ারের জন্য আত্মবিশ্বাসী হোন

১. বি ফোকাসড, এক প্রাচীন শিক্ষক তার ছাত্রদের তীর-ধনুক বিদ্যা শেখাচ্ছিলেন। মাঠের পাশের গাছটিতে একটি কাঠের পাখি রেখে সবাইকে বললেন, পাখির চোখটিকে তাক করতে। প্রথম শিক্ষার্থীকে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কি দেখতে পাচ্ছো? সে বললো, আমি আকাশ দেখছি, গাছ দেখছি, ডালপালা দেখছি, পাখিটা দেখছি, তার চোখ দেখছি। শিক্ষক তাকে তীর ছুড়তে নিষেধ করলেন। দ্বিতীয় জনকে একই প্রশ্ন করা হলো। সে বললো, আমি শুধু পাখির চোখ দেখতে পাচ্ছি। বেশ, ছোড়ো তীর, শিক্ষক বললেন। তীর সোজা গিয়ে লক্ষভেদ করলো। মোরাল অফ দি স্টোরি? ফোকাসড না হলে লক্ষে পৌছানো খুব কঠিন। কড়া রোদে এক খন্ড কাগজের ওপর ম্যাগনিফাইং গ্লাস ধরে অনবরত ঘোরাতে থাকুন। জ্বলবে কাগজটি? কখনোই না। কিন্তু একটি জায়গায় ফোকাস করে গ্লাসটিকে স্থির করে রাখুন। অল্প সময়ের মধ্যেই জ্বলে উঠবে কাগজটি। লক্ষে পৌছানোর জন্য ফোকাসড হওয়া এতোটাই জরুরি।
যে জায়গাটিতে পৌছাতে চাচ্ছেন সেটা শিক্ষাগত কিংবা পেশাগত জীবন যেটাই হোক, এক মুহূর্তের জন্যও লক্ষ থেকে সরে আসবেন না। বিশ্বাস এবং আগ্রহ নিয়ে লেগে থাকুন। সফলতা আসবেই ইনশাআল্লাহ।
২. বি ইন্সপায়ার্ড ইন এ পজিটিভ ওয়ে, একই পরিবারের দুটি ছেলে দুই রকম। একজন মাতাল, ড্রাগ অ্যাডিক্ট, মদ্যপ হয়ে ঘরে ফিরে বউ পেটায়, সহকর্মীদের সঙ্গে মারামারি করে কিছুদিন পরপর চাকরি হারায়। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, তোমার এমন হওয়ার পেছনে কারণ কি? সে বললো, 'আমার বাবা। সে মাতাল ছিল, প্রতিদিন বাড়ি ফিরে মাকে পেটাতো। প্রতিবেশীদের সঙ্গে তার ঝগড়া লেগেই থাকতো। আমার কাছ থেকে আর কি আশা করো?' অন্য ছেলেটি একজন সফল ব্যবসায়ী, চমৎকার একটি পরিবার তার। সবাই তাকে খুব পছন্দ করে। তাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হলো তার এ সফলতার পেছনে অনুপ্রেরণা কে? সে বললো, 'আমার বাবা। ছোটবেলায় যখন দেখতাম বাবা মাতাল হয়ে বাড়ি ফেরে, মাকে পেটায়, প্রতিবেশীর সঙ্গে অকারণে ঝগড়া করে, তখনই আমি ঠিক করেছিলাম এই জীবনটি আমি মোটেই চাই না।' একই পরিবার, একই বাবা, একই কাহিনী_ দুই রকম অনুপ্রেরণা! লেবু কচলে তেতো করা খুব সহজ, লেবু থেকে শরবত বানাতে পারাটাই ক্রেডিট।
৩. দি আদার পিপল আর দি মিরর, একটি গ্রামের প্রবেশ পথের ধারে এক বৃদ্ধ বসে আছেন। এক লোক এসে বললো, 'আমি পাশের গ্রামে থাকি। এই গ্রামে চলে আসতে চাচ্ছি। এখানকার লোকগুলো কেমন?' বৃদ্ধ লোকটি জিজ্ঞাসা করলো, 'যে গ্রাম থেকে তুমি চলে আসতে চাচ্ছো সেখানকার লোকগুলো কেমন?' উত্তরে লোকটি বললো, 'সবাই খুব স্বার্থপর টাইপের, ঝগড়াটে।' বৃদ্ধ লোকটি বললো, 'এখানকার লোকগুলো এমনই।' কিছুক্ষণ পর আরেক লোক এসে বৃদ্ধকে একই কথা বললো, পাশের গ্রাম থেকে সে এখানে চলে আসতে চাচ্ছে, এখানকার লোকগুলো কেমন? উত্তরে বৃদ্ধটি একই প্রশ্ন করলো, 'তোমার গ্রামের লোকগুলো কেমন?' লোকটি বললো, 'সবাই খুব ভালো, উপকারী।' বৃদ্ধটি বললো, 'এ গ্রামের লোকগুলোও এমনই।' চারপাশের লোকগুলো অনেক সময় আপনারই প্রতিবিম্ব। আপনি ভালো হলে তারাও ভালো। বন্ধু পাওয়ার একটি পথ, আগে বন্ধু হওয়া, নিজেকে বন্ধু হিসেবে প্রমাণ দেয়া। ভালো থাকুন, ভালো রাখুন চারপাশের সবাইকে।
৪. সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে দিন শুরু করুন। ঘুম হলো মৃত্যুর খুব হালকা-পাতলা সংস্করণ। না-ও তো জাগতে পারতেন। জেনারেল অ্যানেসথেশিয়া দেয়া হয়েছে অপারেশনের আগে, তারপর রোগীর আর জ্ঞান ফেরেনি_ এমন উদাহরণ কিন্তু আছে। আগামীকাল সকালের পত্রিকাটা পড়বেন এ গ্যারান্টিটাই দিতে পারবেন? যিনি আপনাকে তৈরি করে পাঠিয়েছেন, তিনি তুলেও নিতে পারেন যে কোনো মুহূর্তে। বিখ্যাত গায়ক ফিরোজ সাইয়ের 'এক সেকেন্ডের নাই ভরসা' গানটিই ছিল তার শেষ গান। হিসাব কিন্তু খুব জটিল নয়।
৫. দিনে ২১ বার বলুন, 'আমি ভালো আছি, ভালো করছি'। নীরব দুর্ভিক্ষের এ কঠিন সময়ে দেশের এক-তৃতীয়াংশ লোক পেট পুরে তিন বেলা খেতে পারছে না। সে তুলনায় আমি-আপনি সত্যিই অনেক ভালো আছি। যখন আপনি বারবার বলবেন, আমি ভালো আছি_ ব্রেইন এ মেসেজটা দেহের প্রতিটি কোষে পৌছে দেবে। বলাটা বলতে হবে বিশ্বাস নিয়ে, উৎসাহের সঙ্গে। প্রতিটি কোষই তখন উদ্দীপিত হবে, নতুন চ্যালেঞ্জ নেয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করবে। একজন সফল ব্যক্তির সঙ্গে একজন ব্যর্থ লোকের পাঞ্চ লাইন ডিফারেন্স হলো উৎসাহ। একটি উৎসাহী মনই দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে পারে, চ্যালেঞ্জ নিতে পারে এবং লক্ষে পৌছাতে পারে। একটি বিষণ্ন মুখ একটি বিষণ্ন মনেরই প্রতিচ্ছবি। মনের এ বিষণ্নতার খবর খুব দ্রুত ব্রেইনের মাধ্যমে শরীরের প্রতিটি কোষে পৌছে যায় এবং তা দ্রুতই শরীরকে বিষণ্ন করে তোলে। এরই ফলে দেখা যায় হার্ট ডিজিজি, গ্যাস্ট্রিক আলসার ইত্যাদি। এ দুটি অসুখের ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় বিষণ্নতা ও টেনশন এর অন্যতম প্রধান উৎস।
ধরা যাক, কোনো একটি ব্যাপার নিয়ে আপনি খুব টেনশনে আছেন। কিছু করতে ইচ্ছা করছে না, যেতে ইচ্ছা করছে না, কারো সঙ্গে কথা বলতে ইচ্ছা করছে না ইত্যাদি। প্রশ্ন হলো টেনশন করে কি আপনার সমস্যাটির সমাধান হচ্ছে? মোটেই নয়। বরং এক টেনশন করতে গিয়ে আপনি ক্রমেই আরেক টেনশনকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন। যেহেতু টেনশনের ফলে আপনার মেটাবলিজম সিস্টেম ঠিকমতো কাজ করছে না। সুতরাং এ ইমব্যালান্স অবস্থা দিনের পর দিন চলতে থাকলে ভীষণ রকম অসুস্থতায় পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। সুতরাং শরীর সুস্থ রাখতে চাইলে আগে মন সুস্থ রাখুন। জোরে বলুন, বিশ্বাস নিয়ে বলুন, আমি ভালো আছি, প্রতিনিয়ত ভালো করছি।
৬. অসম্ভব, পারবো না, চেষ্টা করে লাভ নেই, কাজ হবে না_ এ বাক্যগুলো আপনার চিন্তার জগৎ থেকে ফেলে দিন। বলুন ও বিশ্বাস করুন_ পারবো। কোনো কাজে নেমে যখন বিশ্বাস করবেন_ আপনি পারবেন, তখন এ বিশ্বাসটাই আপনাকে সফলতার দিকে ধাবিত করবে। আপনি পারবো বলা মাত্র আপনার ব্রেইন পারবো-এর সুইচটা অন করে এবং পারবো না-এর সুইচ অফ করে দেয়। প্রতি দিন নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন_ কিভাবে আরো ভালো করতে পারি? আত্ম-উন্নয়নের কোনো শেষ নেই। যখন নিজেকে জিজ্ঞাসা করবেন, আরো কিভাবে ভালো করা যায়_ আপনার ব্রেইনই আপনাকে বলে দেবে কিভাবে আরো ভালো করা যায়। চেষ্টা করে দেখুন। নিজের কোর কমপিটেন্স বা সবচেয়ে ভালো দক্ষতা যেটা বিক্রয়যোগ্য সেটাকে চিনুন। তার ওপর নিজেকে দাড় করনোর চেষ্টা করুন। আমাদের ক্রিকেটার রফিকের কোর কমপিটেন্স কি? অবশ্যই তার ক্রিকেট যোগ্যতা। ক্রিকেট নিয়ে লেগে না থাকলে তাকে কি দেশবাসী চিনতো? চান্স খুবই কম।
ক্যারিয়ার নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধান শর্ত হলো, নিজের কোন দিকটি আপনার সবচেয়ে ভালো সেটিকে আবিষ্কার করা, পুরোপুরি ভালোবাসা ও বিশ্বাস নিয়ে সেটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

No comments:

Post a Comment