সাজ্জাত হোসেন
চলতি বাজারে ফ্যাশন ম্যাগাজিন ইন্ডাস্ট্রি অনেক বড় ব্যবসা বলা চলে। এর মাঝে হঠাত্ করে আসা ‘মিস ও অ্যান্ড ফ্রেন্ডস’ নামের ম্যাগাজিনমূলক সাইটটি এত জনপ্রিয় হয়ে উঠবে সেটা কেউ কল্পনাই করতে পারেনি। এই ম্যাগাজিনের প্রথম সংস্করণ বুকস্টোর শেলফ নিয়ে আসে আমেরিকান বাজারে। এ ম্যাগাজিন সম্পর্কে আরো মজার একটা তথ্য হলো, এই ম্যাগাজিনের সৃষ্টির পেছনে রয়েছেন যিনি, তিনি কোনো সাংবাদিক নন, কিংবা পাবলিশিংয়ের উপর তার কোনো ডিগ্রিও করা নেই। মার্কেটিং সম্পর্কে কিছুই বোঝেন না তিনি। তার শুধু আছে ফ্যাশন জগতটাকে ঘিরে তীব্র একটা আগ্রহ। এই ম্যাগাজিনবিষয়ক সাইটির জন্ম দিয়েছেন ২২ বছর বয়সী জুলিয়েট।
জুলিয়েট মাত্র ২০ বছর বয়সে ব্যবসার জগতে পথচলা শুরু করেন মিস ও অ্যান্ড ফ্রেন্ডস নামের একটি সাইটের হাত ধরে। তিনি সেই সময় ওয়াশিংটনের সেন্ট লুইস ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করতেন। তিনি তার বান্ধবীদের সাথে ঘোরাঘুরি করতে অনেক পছন্দ করতেন। একবার এক ফ্রেন্ডের জন্মদিন উপলক্ষে তারা গিফট কিনতে গিয়েছিলেন। পছন্দ করেছিলেন বারবি পুতুলগুলো। সেখান থেকেই মূলত এই সাইটের আইডিয়া আসে তার মাথায়। বারবি পুতুলের
জগতটা তাকে বেশ নাড়া দেয়। সাধারনণত সেখানে মেয়েদের বিভিন্ন ধরনের পছন্দ অনুযায়ী বারবি পুতুলগুলোকে সাজানো হয়েছে। সেগুলো থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি একটি অনলাইন ম্যাগাজিন সাইট পাবলিস করার কথা ভাবেন। যে সাইটে সব বয়সী মেয়েরাই অংশগ্রহণ করতে পারবে। সেখানে তারা তাদের ফ্যাশন, পছন্দ, স্টাইল সম্পর্কে অন্যদের জানাতে পারবে, অর্থাত্ তাদের সবকিছু শেয়ার করতে পারবে। জুলিয়েট এরপর তার বন্ধুদের সাথে ব্যাপারগুলো নিয়ে আলোচনা করেন। তারাও উত্সাহিত হন। কিছুদিনের মধ্যেই তারা এমন একটি সাইট দাঁড় করানোর মতো তথ্য এবং আয়োজন করে ফেলেন। এরপর শুধু একটি কাজই বাকি থাকে। সেটা হলো, গ্রাফিক্স ডিজাইন। সেই কাজটি তার ডিজাইনার মা করে দেন। তিনি একটি কোম্পানিতে গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে কাজ করেন। এরপর জুলিয়েট কিছু চেনা ক্যারেক্টর তৈরি করেন তাদের সাইটের জন্য। এরমধ্যে হার্লি, ইসাবেলা, জাস্টিন প্রভৃতি স্থান পেয়েছে। নিজেকে এই জগতের সাথে আরো সম্পৃক্ত করার জন্য জুলিয়েট আর তার বন্ধুরা নিয়মিত ফ্যাশন শোগুলোতে যান, এমনকি ফ্যাশন কমিউনিটির সাথেও যুক্ত হন। এ বিষয়ক কোনো অনুষ্ঠান হলে তারা তা মিস করেন না, সবগুলোতেই থাকার চেষ্টা করেন আরও বেশি অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য। এ নিয়ে কিছুটা আফসোসের সুরে তিনি বলে, ‘অন্যরা এই সময়গুলোতে, মানে স্কুলের পরে, টিভি দেখা নিয়ে ব্যস্ত থাকে আর আমি ব্যস্ত থাকি বিভিন্ন সেমিনার নিয়ে, যে কীভাবে ম্যাগাজিন নিয়ে কাজ করতে হয়।’ তিনি তার ম্যাগাজিন নিয়ে আরও বলেন, ‘এখন আমি বিক্রির মুডে আছি। আমার ম্যাগাজিনে বিজ্ঞাপনের জন্য জায়গা ভাড়া দিচ্ছি।’ তিনি নিজেও তার ম্যাগাজিনের সাফল্য নিয়ে এতটা আশা করেননি কখনও। জুলিয়েটের জন্ম নিউ জার্সির ভোর্সি শহরে। তার ভবিষ্যত্ পরিকল্পনা হলো, তিনি কলেজে যাবেন এবং পাবলিক রিলেশনের উপর পড়াশোনা করবেন। সেই সাথে তার এই অনলাইন ম্যাগাজিনের কাজ পড়াশোনার পাশাপাশি চলতেই থাকবে। ২০১০ সালে এই অনলাইন ম্যাগাজিনের ঝুলিতে এসেছে আরো সাফল্য। এই ম্যাগাজিনের কথা ইউটিউবেও প্রচার পেয়েছে। সেই সাথে ইন্টারনেট ব্লগিং যোগ করেছে নতুন মাত্রা। বিশ্বের বড় বড় সেলিব্রেটিদের ইন্টারভিউসহ ফ্যাশন সম্পর্কিত আরো অনেক খবরই এতে রাখা হয়, ফলে জনপ্রিয়তাও বেশি পেয়েছে। তার ক্যারিয়ারের এখানেই শেষ নয়। তিনি বেশকিছু টেলিভিশন প্রোগ্রামে হোস্টিংয়ের কাজ করেছেন। সেগুলোতে তিনি কো-হোস্ট আর্টিস্ট হিসেবে ছিলেন। সেগুলোর সবগুলোতেই সফল হয়েছেন তিনি। তার বয়সী মেয়েরা যখন সুপারস্টার হওয়ার স্বপ্ন দেখত, তিনি তাদের কথা তুলে ধরার জন্য তাদের ইন্টারভিউ নিতেন এবং সেগুলো তার এই সাইটেও পাবলিস করতেন। ব্যাপারটা মজাদার ছিল সবার কাছে। আর এই অংশটাই অনেকখানি জনপ্রিয়তা এনে দেয় তাকে। এ ছাড়াও তিনি লিওনা লুইস, ক্রিস ব্রাউন, সিয়েন কিংস্টোন ও লিল ওয়েইনের মতো তারকাদের ইন্টারভিউ, তাদের ব্যক্তিগত জীবনের কথাও লিখতেন। এভাবে একসময় দেখা গেল, অনেকেই তার কথা জানে, তাকে চেনে। তাদের কলেজের একটি নিউজ রিপোর্ট পাবলিস করা হয়। সেখানে তার নতুন একটি বইয়ের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। বইটির প্রায় ১২০,০০০ কপি বিক্রি করা হয়। সাইটটি শুধু তাকে লাভ এনে দেয়নি। সাইটের কারণে অনেকে বিভিন্নভাবে উপকারও পাচ্ছেন। কারণ এ সাইটে উপদেশ দেওয়া থেকে শুরু করে গেম খেলা এবং কারও সাথে কোনো সমস্যা কিংবা ফ্যাশন বিষয়ক মুক্ত আলোচনার সুযোগ রয়েছে। ছোটবেলা থেকেই লিখতে পছন্দ করতেন তিনি। সেসময় থেকেই মোটামুটিভাবে এই বিষয় সম্পর্কে তার আগ্রহ প্রকাশ পায়। সেই সম্পর্কে নিজেই মন্তব্য করেন, ‘আমি এ ফ্যাশন জগতটা বেছে নিয়েছি ও এসব নিয়ে ভাবি, কারণ আমি ক্রিয়েটিভ এই জগতের প্রেমে পড়ে গিয়েছি।’
তথ্যসূত্র : দৈনিক ইত্তেফাক। ০৭ মে, ২০১২।
No comments:
Post a Comment